ঢাকা ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মশা দিবস: মশাবাহিত রোগ থেকে মুক্ত থাকতে চাই জনসচেতনতা 

মশা দিবস: মশাবাহিত রোগ থেকে মুক্ত থাকতে চাই জনসচেতনতা 

আজ রবিবার বিশ্ব 'মশা দিবস' ২০২৩। প্রতিবছর ২০ আগস্ট পালিত হয় এই দিবসটি। ২০ আগস্ট 'মশা দিবস' পালন করা হয় মূলত চিকিৎসক রোনাল্ড রসের আবিষ্কারকে সম্মান জানানোর জন্য। ১৮৯৭ সালের ২০শে আগস্ট চিকিৎসক রোনাল্ড রস অ্যানোফিলিস মশা বাহিত ম্যালেরিয়া রোগের কারণ আবিষ্কার করেছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি এই আবিষ্কারের জন্য 'নোবেল' পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন। ১৯৩০-এর দশক থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।মানুষের বিভিন্ন ভয়াবহ অসুখের মধ্যে মশা বাহিত ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ফাইলেরিয়া, জিকা, ও জাপানিজ এনসেফালাইটিস উল্লেখযোগ্য। তাই মশাবাহিত রোগের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনসাধারণকে বিশেষভাবে সচেতন করার জন্য এই দিবস সারা বিশ্ব জুড়ে পালিত হয়। মশাবাহিত রোগ থেকে সাবধান হওয়ার জন্য, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এই দিনে সমগ্র বিশ্ব জুড়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করা হয়।

মশাবাহিত রোগ হাজার হাজার বছর ধরে মানুষের ইতিহাসে অসুস্থতা এবং মৃত্যুর প্রধান কারণ হিসেবে লিপিবদ্ধ রয়েছে। উনিশ শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত কেউই বুঝতে পারেনি যে মশা রোগের ভেক্টর ছিল। প্রথম সাফল্য আসে ১৮৭৭ সালে যখন ব্রিটিশ ডাক্তার প্যাট্রিক ম্যানসন আবিষ্কার করেছিলেন যে একটি কিউলেক্স প্রজাতির মশা মানুষের ফাইলেরিয়াল রাউন্ডওয়ার্ম বহন করতে পারে। পরবর্তী দুই দশকে তিনি এবং ফ্রান্স, ইতালি, রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য গবেষকরা ম্যালেরিয়াতে গবেষণায় মনোনিবেশ করেন, যা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এবং নাতিশীতোষ্ণ দেশগুলিতে একটি প্রধান ঘাতক। তারা আস্তে আস্তে মানুষ এবং মশার মধ্যে ম্যালেরিয়া সংক্রমণ এবং জীববিজ্ঞানের জটিল সমীকরণ বুঝতে শুরু করেন।

১৮৯৪ সালে, ম্যানসন ম্যালেরিয়া প্যারাসাইটের সম্ভাব্য ভেক্টর হিসেবে 'মশা বিষয়ক অধ্যয়ন' করতে ভারতীয় মেডিকেল সার্ভিসের মেডিকেল অফিসার রোনাল্ড রসকে রাজি করান। বছরের পর বছর নিরলস গবেষণার পর রস শেষ পর্যন্ত ১৮৯৭ সালে প্রমাণ করেন যে অ্যানোফিলিস মশা ম্যালেরিয়া পরজীবী বহন করতে পারে। তিনি তার আবিষ্কারের দিন, ২০ অগাস্ট, ১৮৯৭-কে 'মশা দিবস' বলে অভিহিত করেছিলেন। লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন পরে তার আবিষ্কারের তাৎপর্য চিহ্নিত করতে ২০ অগাস্ট বিশ্ব মশা দিবসের নামকরণ করেন, যা প্রতি বছর পালিত হয়।

অ্যানোফিলিস মশার সাথে এ জটিল যোগসূত্রটিও দেখিয়েছে যে মশার কামড় রোধ এবং মশা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা– ভেক্টর নিয়ন্ত্রণ– ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে।

বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ১২৩ প্রজাতির মশা শনাক্ত করা হয়েছে তারমধ্যে বর্তমান ঢাকাতে আমরা পাই ১৪ প্রজাতির। উষ্ণ আর্দ্র আবহাওয়া থাকার কারণে বাংলাদেশ মশা ও মশাবাহিত রোগ বিস্তারের জন্য উত্তম জায়গা। বাংলাদেশ মশাবাহিত রোগগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া ও জাপানিজ এনসেফালাইটিস।

১৯৬৪ সালে প্রথম বাংলাদেশে ডেঙ্গু ভাইরাস শনাক্ত হলেও সেটিকে তখন 'ঢাকা ফিভার' বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল। ২০০০ সালে প্রথম বাংলাদেশে ডেঙ্গু শনাক্ত হয় এবং সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষ আক্রান্ত হন।

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৬ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৯২ হাজার ২৪ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৪৫ হাজার ২৩০ জন। আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন ৪৬ হাজার ৭৯৪ জন।

এছাড়া এখন পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে মোট ছাড়পত্র পেয়েছেন ৮২ হাজার ৪২৪ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৪০ হাজার ৮৯৯ জন এবং ঢাকার বাইরের ৪১ হাজার ৫২৫ জন।

এর আগে ২০২২ সালে ডেঙ্গুতে ২৮১ জন মারা যান। ওই বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ডেঙ্গুতে ২৭ জনের মৃত্যু হয়। একই সঙ্গে আলোচ্য বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৬২ হাজার ৩৮২ জন।এরপর প্রতিবছরই কমবেশি ডেঙ্গু হয়েছে তবে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা দেশবাসী সবচেয়ে বেশি দেখেছে ২০১৯ সালে। ওই বছর সরকারি হিসাব অনুযায়ী এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। এর মধ্যে ১৭৯ জন মারা যান।আর ২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গু সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। একই বছর দেশব্যাপী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিলবাংলাদেশে ডেঙ্গু একটি পুনরাবির্ভূত রোগ হিসেবে গণ্য। সাম্প্রতিক (২০০০) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন মোতাবেক এদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বিস্ফোরক পর্যায়ে আছে। বিশ্বজুড়েই বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ আর চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছাতে পারে রেকর্ড সর্বোচ্চ। এর অন্যতম কারণ হতে পারে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ুর পরিবর্তন। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ উদ্বেগের কথা জানিয়েছে।মূলত বিশ্বজুড়েই বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। ২০০০ সালের পর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে ২০২২ সালে দাঁড়ায় ৪২ লাখে।ইউরোপে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। ডেঙ্গু সংক্রমণ ঘটায় ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী, এডিস মশার দুটি প্রজাতি। যার একটি হলো এডিস ইজিপ্টি, আরেকটি হলো অ্যালবোপিকটাস। এডিস ইজিপ্টিকে শহরে মশা বা নগরের মশা অথবা গৃহপালিত মশা বলা হয়। আর অ্যালবোপিকটাসকে বলা হয় এশিয়ান টাইগার মশা অথবা গ্রামের মশা। এডিস মশা পাত্রে জমা পানিতে জন্মায় ও বর্ষাকালে এর ঘনত্ব বেশি হয়। তাই ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব এ সময়টায় বেড়ে যায়।

২০০৮ সালে বাংলাদেশে প্রথম চিকুনগুনিয়া ধরা পড়ে যেটি ডেঙ্গুর মত একটি রোগ। এ রোগটি চিকুনগুনিয়া ভাইরাস বহনকারী এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। ২০১১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রায় প্রতি বছর বাংলাদেশে চিকুনগুনিয়া রোগ শনাক্ত হয়। ঢাকাতে সবচাইতে বেশি চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয় ২০১৬–২০১৭ সালে।

বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীব্যাপী মশাবাহিত রোগের মধ্যে অন্যতম হলো ম্যালেরিয়া। অ্যানোফিলিস মশার সাতটি প্রজাতি বাংলাদেশে ম্যালেরিয়া রোগ ছড়ায়

মশাবাহিত,রোগ,দিবস
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত